কিভাবে বাংলা ব্লগার হবেন?


নিজের একটা ছোটখাটো ব্যক্তিগত ব্লগ থাকার সুবাদে প্রায়ই আমাকে ইনবক্সে প্রশ্ন করা হয় যে, কিভাবে নিজের একটা ব্লগ সাইট খোলা যাবে। ওয়েল, আমি এর উত্তরে প্রথমেই বলি, আপনার যদি আগে কখনো ব্লগিং করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তবে আপনার শুরুটা হওয়া উচিত কমিউনিটি ব্লগিং দিয়ে। কারন সেখানে আপনার হাত পাকবে, লেখা ম্যাচিউর হবে। আর সবচাইতে বড় যে উপকারটা হবে সেটা হলো, আপনি আপনার লেখার সমালোচনা সহ্য করার শক্তি অর্জন করতে পারবেন; যেটা অনেক বড় বড় কবি লেখকেরও নাই।
আপনার লেখার গঠনমূলক সমালোচনা আপনাকে অনেক বেশী শানিত করবে, নিজের দৌঁড় কতটুকু এবং আরো কতটা পথ আপনাকে যেতে হবে, সে ব্যাপারে সম্যক ধারনা পাবেন। এইসব কমুনিটি ব্লগেই সম্ভব। ব্লগিং লাইফের শুরুটা ব্যাক্তিগত ব্লগ দিয়ে শুরু করলে এই মূল্যবান সুযোগগুলো হারাবেন। আর অন্যদের লেখা, অন্যদের ব্লগ প্রচুর পড়বেন। শুরু অন্ততঃ একটা বছর নিজে খুব কম লিখবেন। অন্যদেরটা পড়বেন বেশী। যত বেশী পড়বেন, আপনার ব্লগিংয়ের জন্য ততই মঙ্গল।

বাংলাদেশের কয়েকটি স্বনামধন্য কমিউনিটি ব্লগঃ

  • সামহোয়্যারইনব্লগঃ বাংলাদেশের সবচাইতে বড় কমিউনিটি ব্লগ। রেজিষ্টার্ড ব্লগার প্রায় মিলিয়নের কাছাকাছি। নিয়মিত ব্লগারও হয়তো লাখ খানেকের কাছাকাছি হবে। আমার অনলাইনে বাংলা লেখার হাতে খড়ি হয়েছিলো এই ব্লগেই। মডারেশনে প্রচন্ডরকম পক্ষপাতদুষ্ট থাকার জোরালো অভিযোগ আছে এই ব্লগটির বিরুদ্ধে। জামাত শিবিরের ভাড়াটে ব্লগারদের প্রতি নমনীয় আচরন করায় আমি ব্লগটি ছেগে চলে আসি চিরদিনের জন্য। লেখার জায়গা ছাড়তে পারি, আদর্শ তো আর ছাড়া যায় না।
  • আমারব্লগঃ সামহোয়্যারের এক্স-ব্লগাররাই বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে এটাকে গড়ে তোলে। কট্টর আওয়ামীপন্থী ব্লগ হিসেবে আমারব্লগ পরিচিত। শুরুতে এই ব্লগের নিয়মিত ব্লগার থাকলেও ২০০৯ থেকে কিছু ব্যক্তিগত কারনে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিই এখান থেকে। ব্লগার/পাঠক বেশ কম এই ব্লগের। খুব সম্ভবত এই ব্লগটি অনলাইনে এখন আর সক্রিয় নয়।
  • চর্তুমাত্রিক ব্লগঃ এই ব্লগের কর্ণধারও এক সময় সামহোয়্যারে নিয়মিত ব্লগিং করতো। ক্রিয়েটিভ রাইটিংসের জন্য এই ব্লগ খারাপ না। আমি দুয়েকটা পোষ্ট দিয়ে চলে এসেছিলাম। কারন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এর পরিবেশ ঠিক উপাদেয় মনে হয়নি। তবে সব মিলিয়ে খারাপ না।
  • সচলায়তন ব্লগঃ এটাকে আসলে ব্লগ না বলে লেখক ফোরাম বলাই ভালো। এর বেশীরভাগ ব্লগারই লেখক হিসেবে বাজারে কম-বেশী প্রতিষ্ঠিত কিংবা অভিজ্ঞ। লেখার মানের দিক থেকে সচলায়তন আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা ব্লগ। তবে একটাই সমস্যা, এই ব্লগের চারিদিকে কাটাঁতারের বেড়া। যে কোন ব্লগার চাইলেই ঢুকতে পারবে না। তাকে আগে “অতিথি লেখক” হিসেবে একটা অনির্দিষ্টকালের জন্য লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে। তারপর যদি মডারেটরদের দয়া হয়, তবেই তারা আপনাকে স্বনামে লিখতে দিবে। এই ব্লগের কোন লেখাও সহজে কপি করা যায় না, কনটেন্ট/টেক্সট প্রটেক্ট  করা। 
  • ইষ্টিশন ব্লগঃ খুব সম্ভবত, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম অনলাইন বইয়ের দোকানের কর্ণধার এই ব্লগটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যদিও তার সাথে আমার মতাদর্শিক দ্বন্ধ চরম। আমি এখানে বেশ কয়েক মাস নিয়মিত লেখালেখি করেছিলাম। নতুন ব্লগারদের ক্রিয়েটিভ রাইটিংসের জন্য এই ব্লগ বেশ ভালো।
  • মুক্তমনা ব্লগঃ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে মনে হয় এই ব্লগটিকে নিয়ে যত আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, আর কোন ব্লগ নিয়ে ততটা হয়নি । এর কারন, এর বেশীরভাগ ব্লগারই নাস্তিক অথবা সংশয়বাদী। এরা বিজ্ঞানমনস্ক। ক্রিয়েটিভ রাইটিংসের চাইতে বরং যুক্তি ও বিজ্ঞান নিয়ে গঠনমূলক লেখালেখির জন্য এই ব্লগটি উত্তম। মানে, এর ব্লগাররা সাহিত্য লেখার চাইতে ডকুমেন্টারি লিখতে বেশী পছন্দ করে।
  • আমরা বন্ধুঃ এটাও সামহোয়্যারে কয়েক জন বন্ধু মিয়ে বানিয়েছিলো কয়েক বছর আগে। প্রথম বছরে নিজেদের ফ্রেন্ড সার্কেলের লোকজনই টুকটাক ব্লগিং করতো, তারপর ধীরে ধীরে এটা নিজেদের সার্কেলের বাইরে গিয়ে কমিউনিটি ব্লগে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে নামের কারণেই কিনা জানি না, এরা এখনো ঠিক কমিউনিটি ব্লগ হয়ে ওঠেনি।
আপাততঃ এই কয়টি কমিউনিটি ব্লগের নামই মনে পড়ছে। এছাড়াও, অনেক স্বনাম ধন্য ব্লগারের ব্যক্তিগত ব্লগ আছে। পাঠক হিসেবে সে সবও পড়া যেতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতা আর লেখার ধরন থেকে নতুন ব্লগাররা অনেক কিছুই শিখতে পারবেন বলে বিশ্বাস করি।
এটুকু বুঝে গেলে আপনার জন্য পরবর্তী উপদেশ হচ্ছে, কমিউনিটি ব্লগিংএ পরস্পর পিঠ চুলকাচুলকি বা বেহুদা গ্রুপিং থেকে বিরত থাকবেন। বাঙ্গালী কোথাও গেলে গ্রুপ না বানিয়ে থাকতে পারে না, এটা বেশীরভাগ সময়ই ভালো ফল দেয় না।
আর আপনি যদি সমালোচনা একান্তই সহ্য করতে না পারেন, তবে আমার মনে হয় অনলাইনে লেখালেখি করতে না আসাই ভালো হবে আপনার জন্য। দিস্তার পর দিস্তা লিখে নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রতি বছর বই মেলায় বই ছাপাবেন। অধিক বাহবা পাবেন, ক্রেতা-পাঠকদের অটোগ্রাফ দিয়ে তাদের সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে দিবেন। কেউ আপনার সমালোচনা করতে আসবে না, আপনিও আজীবন কুয়ার ব্যাঙই হয়ে থাকবেন। নিজের লেখাই সবচাইতে ভালো বলে আত্নতৃপ্তির ঢেকুঁর তুলবেন।
কনভারসেশনের এই পর্যায়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ভাই ব্লগিং করে টাকা পয়সা কেমন কামানো যায় একটু বলবেন?
সোজা উত্তর হচ্ছে, এ ব্যাপারে আমার কোনই অভিজ্ঞতা নাই। কারন ব্লগিং করে আজ পর্যন্ত আমি একটা ফুটা পয়সাও পাইনি। কোনদিন পাবার ইচ্ছাও নাই, কোনদিন ছিলো না। বরং, আমার নিজের পকেট থেকে অনেক সময় পয়সা খরচ করতে হয়েছে। সুতরাং লেখালেখি করে ইনকাম করার ইচ্ছা থাকলে আমি পরামর্শ নেবার জন্য উপযুক্ত লোক নই। অন্য লোক ধরেন। গুগলে এটা লিখে সার্চ দিলেও বিস্তর পোষ্ট পাবেন। কারন, এটাকে মনে হয় যেন ব্লগিংয়ের প্রতি নিজের ভালবাসাকে ফেরি করে সস্তায় বিকোনো। যেন নিজের প্রতিভার সাথে এক বিরাটাকার প্রহসন। এটা আমার ব্যক্তিগত মতদর্শন। সুতরাং, আমি ব্লগিংকে পেশা হিসেবে নিতে নিরুৎসাহিত করছি, এমনটা ভাবার কোন কারন নেই।
ব্লগিং করে সাধারনত টাকা দুই ভাবে কামানো যায়। আপনার ব্লগিং এর গুনটাকে আউটসোর্স করে, মানে ব্লগিংটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে।
ব্যাপারটা অনেকটা ঘোষ্ট রাইটারের (Ghost Writer) এর মতই। মানে, আপনি লেখাটা নিজের জন্য না লিখে আপনার গ্রাহকের জন্য লিখবেন। বিনিময়ে আপনি তার কাছ থেকে টাকা পাবেন। মানে সে তার হয়ে পোষ্ট লেখার জন্য আপনাকে ভাড়া করবে। বাংলাদেশে ভাড়াটে ব্লগারের সংখ্যা এখনো খুবই কম। তবে পার্ট টাাইম কাজ করার জন্য এটা একটা চমৎকার পেশা। আশা করছি, এই পেশার চাহিদা আমাদের দেশে দ্রুতই বাড়বে। এই পেশায় কাজ করতে করতে পৃথিবীর অনেক ব্লগারই রীতিমতো জাদরেঁল লেখকে পরিনত হয়ে গেছেন।
তবে বাংলাদেশে SD Asia এর মতো কিছু বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান আছে, তারা ব্লগার ভাড়া করে, কমিশনে পয়সা দেয়। তবে আমার পরিচিত অনেক ব্লগারেরই SD Asia এর ব্যাপারে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। পোষ্ট ভিউয়েংএ অস্বচ্ছতা, ঠিকমতো পয়সা দেয় না, টাকা দেবার সময় ঘুরায়, যোগাযোগ করে না, হেমডওয়ালা ভাব দেখায় –  ইত্যাকার অভিযোগ রয়েছে SD Asia এর বিরুদ্ধে। সুতরাং, আমার পরামর্শ থাকবে, যতটা সম্ভব দেশীয় কোন ব্লগিং এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে চলার।

ব্লগিং করে টাকা কামানোর ২য় পদ্ধতি হচ্ছে, ব্লগিংয়ের জন্য ওয়েব সাইট বানানো, সেখানে ভিজিটর বাড়ানো ও সেই ভিজিটর দেখিয়ে এড নেয়া, তারপর সেই এড থেকে কমিশন নেয়া (বলা বাহুল্য, গুগল এডসেন্স এই ব্যবসার পথিকৃত) অথবা সরাসরি লোকালাইজড বিজ্ঞাপন দেয়া। আমাদেশের দেশের বেশ কয়েকটা কমিউনিটি ব্লগ (যেমনঃ বায়োস্কোপ ব্লগ বা টেক টিউনস ব্লগ ইত্যাদি) লোকাল এড ব্যবহার করে ভালো পয়সা কামাচ্ছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে, ”ব্লগিং করে টাকা কামানোর” – এই পদ্ধতিটিকে খুবই অপছন্দ করি।
আমার অভিজ্ঞতা বলে, যারা সাইটে এড দিয়ে টাকা কামানোর ধান্ধায় ব্লগিং করে, তারা কিছুদিন টাকা কামাতে পাারলেও এক সময় খুব খারাপভাবে ধব্বসে যায়। টেকটিউনসের কথাই ধরি। বাংলা ভাষায় সবচাইতে বড় টেকি ফোরাম, এক সময় ওখানে হাজার ব্লগারের ভীড় ছিলো অথচ আজ ওদের সাইটে হাজার হাজার এড অথচ তেমন কোন মানসম্মত লেখা নাই তাই ইউজারও নাই, ভিজিটরও তেমন একটা নাই। সামুও তাই। সামু আজ মুটামুটি বানিজ্যিক ব্লগ হয়ে গেসে। এই কারনেই ব্লগের সেই স্বর্ণালি দিনগুলোও নাই আর। এইরকম আরো অনেক উদাহরন দেয়া যাবে। এই কারনেই, পৃথিবীর অনেক নামকরা ব্লগার আছেন, যাদের ডেইলি পেইজ ভিজিট কয়েক লাখ, অথচ তাদের সাইটে আপনি একটাও এড খুজেঁ পাবেন না।
আমি লিখি একেবারেই শখে। এই কারনে আমার পারসোনাল ব্লগ আজীবনই বিজ্ঞাপনমুক্ত ছিলো, আছে। আপাততঃ সাইটের ট্রাফিক দিয়ে কানা কাড়ি পয়সাও কামানোর ইচ্ছা নেই।
গাছ লাগিয়ে ফল খেতে চাওয়াটা মোটেও দোষের কিছু নয়। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো, আমরা রাতের বেলা ফলের চারা মাটিতে পুতেঁ পরদিন সকাল বেলা ফল খেতে চাই। ফল খেতে হলে যে বছরের পর বছর ধরে চারাটিকে পরিচর্যা করে সেখানে সময়, পয়সা ও ভালবাসা বিনিয়োগ করতে হয়, সেটা আমরা বেশীরভাগ লোকজনই বুঝতে চাই না। এই কারনেই, ফল তো খাওয়া হয়ই না, চারাটাও অকালে মারা যায়, মাঝখানে দোষ হয় চারার, আর আপনি হারান আপনার মনোবল। হতাশ হয়ে গালাগাল করেন, দোষ ছিলো চারার। তাই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফল পান নি।

আমার ধারনা, ব্লগে বিজ্ঞাপন দিলে ব্লগের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নষ্ট হয়, দৃষ্টিকটু দেখায়। এড যত বেশী হবে, পাবলিক এই কারনে তত বেশী বিরক্ত হবে। এড আপনার জন্য ভালো। আপনার ভিজিটরদের জন্য নয়। এই কারনেই গত বছর থেকে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন আশংকাজনকহারে বাড়ার কারনে গুগল তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলো। গুগলের শেয়ার প্রাইসও ড্রপ করেছিলো।
যা হোক, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর ব্যাপারটা একটু ব্যাখা করি।
অনলাইন পাঠক, বিশেষ করে যারা মোবাইল ডিভাইস থেকে সাইট ভিজিট করেন, তাদের ডিসপ্লে ছোট, তাই অনেক সময় একটা ক্লিক করতে চাইলে অন্যটাতে ক্লিক পড়ে, এডে ক্লিক পড়ে, বেশী এড থাকলে এই সমস্যা আরো বেশী হয়। পাবলিক টাকা দিয়ে ব্যান্ডইউথ কিনে। ফোনের ব্যান্ডউইথের দামও বেশী। এইসব বেহুদা বিজ্ঞাপনে এমবি নষ্ট হলে মোবাইল ইউজাররা আপনার সাইটে আসা আস্তে আস্তে কমিয়ে দিবে, এক সময় একেবারেই বন্ধ করে দিবে, তা আপনি যত ভালো ব্লগারই হন না কেন। আর এখনকার অডিয়েন্সের শতকরা ৬০-৭০ ভাগ মোবাইল থেকে আসে। অর্থাৎ, মোবাইল ট্রাফিক হারানো মানে আপনার পাঠকদের সিংহভাগই আপনি হারালেন।
অপরদিকে, স্বেচ্ছায় এডে ক্লিক করে কোন সাইটে যাওয়া ও তাদের সেবা/পণ্য কেনা, আমাদের দেশের ব্লগ পাঠকদের মাঝে এ ধরনের অভ্যাস এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং, সাইটে এড দিয়ে কাজের চেয়ে অকাজটাই আপনার বেশী হবে। এমনকি যারা লোকালি এড দিচ্ছে (যেমনঃ বিক্রয়, সেলবাজার, কায়মু ইত্যাদি), এডের ব্রান্ড, ব্যানার, ডিজাইন সব লোকাল, সব দেশীয় ঘরানা, তারপরও পাবলিক এড দিয়ে টাকা পেতে হিমের সাথে শিম খাচ্ছে। আর ট্রাডিশনাল গুগলসেন্সের কথা তো বাদই দিলাম।
এবার কিছু তিক্ত অথচ সত্য কথা বলি।
টাকা পয়সার ধান্ধা থাকলে ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হতে বাধ্য। এটা নিপাতনে সিদ্ধ। লেখালেখি ব্যাপারটার আদ্যোপান্ত সৃজনশীল। ব্লগিং করতে হবে শুধু লেখালেখির নিয়ত করেই। ভাববেন, পাবলিক আপনার লেখা পড়বে, আবার আসবে, আবার পড়বে, মজা পাবে। এইটাই আপনার লাভ। কোন আর্থিক লাভের ধান্ধা ঢুকলেই ভাববে ঐদিন থেকে আপনার ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হওয়া শুরু করবে, একটা সময় ইউজার হারানো শুরু করবেন। আম যাবে ছালা যাবে সাথে আটিঁ। আমি অনেককেই জানি, আউটসোসিং করে দেদারছে টাকা কামাবে, এই নিয়ত করে ফটোশপ শিখেছে, ওয়েব ডেভেলপিং শিখেছে, কিন্তু খুব বেশী দূর যাবার আগেই তারা মুখ থুবড়ে পড়েছে। টাকা আর সময়ের অপচয় তো হয়েছেই, কাজের কাজ যেটা হয়েছে – তাদের বেশীরভাগেরই মনোবল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো অনেকে ভাবে, আউটসোর্সিং করা মানে মাউস দিয়ে ক্লিক করলেই পয়সা! :/
তবু যারা একেবারেই নাছোড়বান্দা, মানে ব্লগিং করে এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা কামাতে চান, তাদের জন্য ছোটখাটো কয়েকটা টিপস দেই।
ব্লগিং করে, এডসেন্স দিয়ে পরচুর পয়সা কামানো সম্ভব, কিন্তু সেটা ঠিক কিভাবে, কতটুকু পর্যায়ে গেলে, সেটা বুঝতে গেলে আপনার অনেক, অনেক এবং অনেক সময় দিতে হবে ব্লগিং এর পেছনে। নিজের বুদ্ধি খাটান, স্মার্ট হন, অধ্যাবসায়ী হন, অন্যেরা কিভাবে ব্লগিং করছে দেখুন। আর প্রচুর পড়ুন। প্রচুর। স্টাডি (তা সেটা অনলাইন বা অফলাইনে যেখানেই হোক না কেন) করার অভ্যাস যত বেশী ভালো হবে, আপনি লেখালেখিতে তত ভালো হবেন, এটা মুটামুটি গ্যারান্টিড।
আপনার কনটেন্টে ক্রিয়েটিভিটি ও ইউনিকনেস আনুন। এমন কিছু নিয়ে লেখার চেষ্টা করুন যেটা নিয়ে আগে কেউ কখনো লিখেনি অথচ ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। ভাবুন যে আপনি আপনার পাঠকদের জাগায় থাকলে কি চাইতেন, সে মোতাবেক কাজ করুন। আর একদমই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। যত তাড়াহুড়ো করবেন, নিজের পায়ে তত জোরে কুড়াল মারবেন। এভাবে টানা দুয়েক বছর পুরোপুরি এডবিহীন ব্লগিং করুন, ট্রাফিক টানুন, পাঠকদের আস্থা অর্জন করুন। তারপর এক সময় নিজেই বুঝকেন, কখন আপনার সাইটে এড দেবার সময় হয়েছে। 🙂
গুডলাক। হ্যাপি প্রফেশনাল ব্লগিং।

No comments:

Post a Comment